তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস

তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস নাকি অন্য কিছু এ বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। অনেক সময় তলপেট ব্যথা হলেই আমরা সেটিকে অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথা বলে মনে করি। আজকের এই পোস্টটি থেকে আপনারা তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। অতএব পোস্টটি পড়ে ফেলুন। 
অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা অত্যন্ত মারাত্মক, যা অসহ্যকর অনুভূতি সৃষ্টি করে। তলপেটের ব্যথার বিভিন্ন লক্ষণ দেখলে এটি এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা কিনা তা আপনারা চিহ্নিত করতে পারবেন। তাই সব সময় তলপেটে ব্যথা হলে সেটি অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা হবে এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। এই পোস্টটি পুরোটা পড়লে আপনারা তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস নাকি অন্য কিছু এ বিষয়টি সুন্দর মত বুঝতে পারবেন। তাই দেরি না করে এখনই পোস্টটি পড়া শুরু করুন।

পোস্ট সূচিপত্র -  তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস জেনে রাখুন

এপেনডিসাইটিস কী

আমাদের বৃহদন্ত্র নলের মতো ফাঁপা থাকে। বৃহদন্ত্রের তিনটি অংশের মধ্যে প্রথম অংশ হলো সিকাম, আর এই সিকামের সাথে আঙ্গুলের মত প্রবৃদ্ধযুক্ত অংশকে অ্যাপেন্ডিক্স বলে নামকরণ করা হয়। কোন কারনে যদি এপেন্ডিক্সের ভেতর পচন ধরা খাবার ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান ঢুকে যায় তাহলে রক্ত ও পুষ্টির অভাব পরিলক্ষিত হয়। জীবাণুর আক্রমণে অ্যাপেন্ডিক্স এর এই অংশে নানা উপসর্গ দেখা দিলে তাকে এপেন্ডিসাইটিস বলে। এই পোস্ট থেকে আপনারা তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস এ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা অর্জন করবেন। 

এপেনডিসাইটিস হওয়ার লক্ষণ 

প্রিয় বন্ধুরা আপনাদের জানিয়ে রাখতে চাই যে, এপেন্ডিসাইটিস অত্যন্ত মারাত্মক একটি সমস্যা। অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা দেখা দিলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো কাজ করতে আমরা অপারগ হয়ে পড়ি। সকল প্রকার তলপেট ব্যথাই যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হওয়ার লক্ষণ, সেটি আমি বলছি না। তবে এপেনডিসাইটিসের ব্যথা আলাদা করে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ করে। এসকল লক্ষণ দেখলে আপনি খুব সহজেই এপেনডিসাইটিস হয়েছে কিনা তা আঁচ করতে পারবেন। চলুন এপেন্ডিসাইটিস হওয়ার লক্ষণগুলো এবার জেনে ফেলি। 
  • অ্যাপেন্ডিসাইটিস ব্যথার প্রধান লক্ষণ হল দীর্ঘদিন যাবত একটানা পেট ব্যথা হওয়া। 
  • ব্যাথার তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেলে বুঝবেন সেটি অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা। 
  • অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা সাধারণত নাভির থেকে শুরু হয়, অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি নাভির চারপাশে গ্রাস করে ফেলে। 
  • অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা হলে সাধারণত খাবারের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়। খাবারের প্রতি এক প্রকার এলার্জি সৃষ্টি হয়। 
  • সর্দি কাশি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব ও জ্বর লেগে থাকতে পারে। 
  • ব্যথার চোটে শরীর নাড়াচাড়া করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্যথার মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে তা সহ্য করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। 
  • আশা করি অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথার লক্ষণ গুলো জেনে নিলেন। এবার তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস এ বিষয়টি পোস্টের পরবর্তী অংশ পড়ে জেনে নিন। 

তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস? 

সব সময় তলপেটের ব্যথা মানেই যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হবে এমনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। এপেনডিক্স অঞ্চলে আরো রয়েছে মূত্রাশয়, মূত্রনালী, জরায়ু সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এসকল অঙ্গের যে কোন অস্বাভাবিকতার কারণে তলপেটের ডানে বা বামে ব্যথা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। প্রস্রাবের সংক্রমণ, ডিম্বাশয় সিস্ট, মুত্রাশয়ের পাথর ইত্যাদি নানা কারণেই তলপেট ব্যথা হতে পারে। তাই এপেন্ডিক্সের ব্যথার লক্ষণগুলো পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত না হলে, শুধু তলপেটে ব্যথা হলেই যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হবে এমনটা ভাবা সমীচীন নয়। তাই তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস কিনা তা আপনারা সহজভাবে বুঝে ফেললেন। 

এপেনডিসাইটিস কেন হয় 

এপেন্ডিসাইটিস মূলত কি কারনে হয় এ বিষয়টি এখনো চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সুস্পষ্ট নয়। তবুও আমি আপনাদের সামনে অ্যাপেন্ডিসাইটিস কি কারনে হতে পারে সে বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরলাম। তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস এ তথ্যটি তো জেনেছেন। এবার এপেন্ডিসাইটিস হওয়ার কারণগুলো জেনে নিন। 
  • নাড়ী-ভুঁড়িতে তৈরি হওয়া পায়খানার একটি দোলা যদি এপেন্ডিক্স এ আটকে যায় তবে সেখান থেকে ইনফেকশন হয়ে এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।
  • কোন কারণে ময়লা জমে যদি অ্যাপেন্ডিক্সের মুখ বন্ধ হয়ে যায় তবে তীব্র প্রদাহ অনুভুত হয়। 
  • নাড়ী ভুঁড়ির দেয়ালে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কিছু গ্রন্থির সংক্রমণের কারণে অ্যাপেন্ডিক্স বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা দেখা দেয়। 
  • শরীরের ভেতরে অতিরিক্ত পরিমাণ দূষিত পদার্থ উৎপন্ন হলে সেটি এপেন্ডিসাইটিস এর ভেতরে প্রবেশ করে। এতে করে অ্যাপেন্ডিক্স এর ভেতরের চাপ বেড়ে যায়। আর এ সকল দূষিত পদার্থের প্রভাবে এপেন্ডিক্স ফেটে যায়। ফলে এপেন্ডিসাইটিস এর তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। সুতরাং অ্যাপেনডিসাইটিস হওয়ার মূল কিছু কারণ আপনারা জেনে নিলেন। 

অ্যাপেনডিসাইটিস পরীক্ষা করার নিয়ম 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা ইতোমধ্যে পোষ্টের পূর্ববর্তী অংশ হতে আপনারা তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস সে সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। এবার এপেন্ডিসাইটিস কিভাবে পরীক্ষা করে সেই নিয়মগুলো সংক্ষিপ্ত পরিসরে জেনে নিন।
  • রোগীকে কাশতে বলে দেখতে হবে যে পেটে তীব্রতর ব্যথা অনুভব করে কিনা। যদি অনুভব করে তবে বুঝতে হবে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যাথা আক্রমণ করেছে। 
  • ধীরে ধীরে কুঁচকির উপর হালকা করে চাপ দিতে থাকুন। তারপর বোঝার চেষ্টা করুন ব্যাথা লাগছে কিনা। সবশেষে হাত সরিয়ে নিন। 
  • তলপেটের বাম দিকে সজোরে চাপ দিলে যদি ভেতরের নাড়িভুঁড়ি ডান দিকে চলে যায়, তবে ডান সাইডে তীব্র ব্যথা অনুভূত হবে। এই লক্ষণটি প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই আপনি বুঝে নেবেন যে এটি এপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ। 
  • স্বাভাবিক হাঁটাচলা ও নড়াচড়া এবং কাজ করতে গেলে যদি তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় তবে নিশ্চিত হবেন এটি অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর কারণেই হচ্ছে। এসব লক্ষণ গুলো দেখেই মূলত ডাক্তাররা প্রাথমিকভাবে একজন অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর রোগী শনাক্ত করে থাকেন। 
  • বন্ধুরা আপনারা যদি তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে চান তবে পোস্টের পূর্ববর্তী অংশটি আবারও পড়ে ফেলতে পারেন। 

অ্যাপেনডিসাইটিসের চিকিৎসা পদ্ধতি 

তলপেট ব্যথার লক্ষণ দেখে আপনারা অ্যাপেন্ডিসাইটির শনাক্ত করার বিষয়টি অলরেডি শিখে ফেলেছেন। কিন্তু অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ব্যাথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তেমন কোন ঘরোয়া সমাধান নেই। তাই এপেন্ডিসাইটিস হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে অপারেশন করতে হবে। অপারেশন করে অ্যাপেন্ডিক্সটি কেটে ফেলাই এর একমাত্র চিকিৎসা। কোন ঔষধ বা এন্টিবায়োটিকে অ্যাপেন্ডিসাইটিস সারে না। তাই এপেন্ডিসাইটিস হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। 
  • ওপেন সার্জারী: সাধারণভাবে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে বা অন্য কোন জটিলতা থাকলে তলপেটের নির্দিষ্ট অংশ কেটে অপারেশন করার প্রয়োজন হয়। অপারেশন করার এই পদ্ধতিকে ওপেন সার্জারি বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় অভিহিত করা হয়ে থাকে। ওপেন সার্জারি করতে ১ থেকে ২ ঘন্টা সময় লাগতে পারে। আমাদের দেশে অধিকাংশ ডাক্তাররাই অ্যাপেন্ডিক্স এর চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে ওপেন সার্জারি পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন। তাই অ্যাপেন্ডিক্স এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে ওপেন সার্জারি অত্যন্ত বিশ্বস্ত একটি অপারেশন সিস্টেম। 
  • ল্যাপারোস্কোপি: এই অপারেশন পদ্ধতিতে সরাসরি পেট কাটার বদলে তলপেটের নির্দিষ্ট অংশে দুই থেকে তিনটি ফুটা করা হয়। এসব ছিদ্র দিয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্র ঢুকিয়ে অপারেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। অপারেশনের পর রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রায় কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। এ সময় অপারেশনের রোগীর কোন ভারী কাজ না করাই শ্রেয়। আপনারা এপেন্ডিক্স এর চিকিৎসা পদ্ধতিও জেনে নিলেন। পরিশেষে তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস এ তথ্যটি জেনে নেওয়ার জন্য পোস্টের পূর্ববর্তী অংশ দেখে নিন। 

শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুরা আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনারা তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস সে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন। একই সাথে অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা কিরূপ হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা অর্জন করেছেন। আশা করি এই পোষ্টটি আপনাদের যথেষ্ট কাজে দেবে। সুতরাং, অন্যান্য বন্ধুদের তলপেটে ব্যথা মানেই কি অ্যাপেনডিসাইটিস এ বিষয়টি জানাতে চাইলে পোস্টটি শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ। @23891

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url