দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম
পেজ সূচিপত্র
- কতক্ষন ধরে দাঁত মাজতে হবে
- দাঁত মাজার সঠিক টুথব্রাশ নির্বাচন কিভাবে করবেন
- দাঁত মাজার কৌশল কেন জানবেন
- দাঁত মাজায় ব্রাশ ব্যবহারের অভ্যাস
- দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম
- দাঁত মাজায় কতক্ষণ চাপ প্রয়োগ করবেন
- দাঁতের ব্রাশ কেন পরিবর্তন করবেন
- দাঁতের সঠিক যত্নে কিছু করণীয়
- শেষকথা
কতক্ষন ধরে দাঁত মাজতে হবে
সকল মানুষকেই দিনে দুইবার দাঁত মাজতে হয় যদিও এটা সকলেই কমবেশি জানে কিন্তু ঠিক কতখানি সময় ধরে সেই মানুষটার দাঁত মাজা উচিত সেটা অনেকাংশেই অজ্ঞাত থেকে যায় অর্থাৎ অনেকেরই জানা থাকে না। কিন্তু আপনাদের মাথায় রাখতে হবে আপনি যখন প্রত্যেক বাড়ির দাঁত মাজতে যাবেন তখন আপনাকে কমপক্ষে দুই মিনিট সময় দাঁত মাজার জন্য ব্যয় করার চিন্তা রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা দেখুন
যদি আপনি এর চেয়ে কোন অংশে কম দাঁত মাজতে চান তাহলে কখনোই আপনার দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার হবে না। আবার, অনেক সময় ধরে আপনি যদি দুই মিনিটেরও বেশি সময় ধরে দাঁত শুধু মেজে যাচ্ছেন তাহলেও আপনার দাঁতের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে কারণ তখন আপনার দাঁতের মাড়ির গামলাইনে এক ধরনের ক্ষত তৈরি হয় যার ফলে আপনার দাঁত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দাঁত মাজার সঠিক টুথব্রাশ নির্বাচন কিভাবে করবেন
নিশ্চয়ই আপনি যখন দাঁত মাজার জন্য চেষ্টা করেন তখন একটি ব্রাশকে ব্যবহার করেন, দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম জানতে হবে। আপনি হয়তো এটাও ভাবতে পারেন যেকোন একটি ব্রাশ ব্যবহার করলেই তো হয় সমস্যা কোথায়? প্রত্যেকটি মানুষেরই এক একটি আলাদা চেহারা, মুখ বা চোয়ালের গঠন প্রণালী, দাঁতের সেটিং সবকিছুই ভিন্ন।
কিন্তু এই অবস্থায় যদি একজন অন্যজনের মাপের ব্রাশ ব্যবহার করে তাহলে এটি খুবই সমস্যার কারণ হয়। এই কারণে আপনি যদি নিজের মুখ ও দাঁতের জন্যে সঠিক ব্রাশকে নির্বাচন করতে না পারেন তাহলে তা খুব সমস্যার ব্যাপার। কারণ কিছু কিছু লোকের মুখের ভিতরের অংশ খুব নরম ও নমনীয় হয়ে থাকে। এর জন্য নরম ও কোমল ব্রাশ মাজার জন্য প্রয়োজন হয়।
আপনি যদি এই ব্রাশের জন্য সচেতন না হন তাহলে আপনার মাড়ির ফোলা অনেক বেড়ে যেতে পারে। আর বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় আপনি যদি ভালোভাবে দাঁত না মাজেন তাহলে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তও পড়তে পারে যা আপনার অনাগত সন্তানের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই সঠিক ব্রাশকে নির্বাচন করে মাজার চেষ্টা করুন এবং নিজের মাড়িকে ভালো রাখুন।
দাঁত মাজার কৌশল কেন জানবেন
আপনি যদি দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম এবং দাঁত মাজার কৌশল সম্পর্কে না জানেন তাহলে ঠিকভাবে দাঁত মাজতে পারবেন না। উল্টাপাল্টা ভাবে দাঁত মাজার ফলে আপনার তাদের মাড়ির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। দাঁত মাজার কৌশলগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত চলুন জেনে নিই।
- আপনি যদি ব্রাশ দিয়ে সামনে পেছনে খুব দ্রুত মাজার চেষ্টা করেন তাহলে আপনার দাঁতের মাড়ির গাম অনেক বেশি ক্ষতির শিকার হয়।
- অপরদিকে মাড়ির গাম ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে আসে এবং আপনার দাঁতের মাড়িতে অনেক সময় ইনফেকশন হয়ে অনেক রক্তপাতও করতে পারে।
- এই কারণে আপনার দাঁতগুলো মাজার সময় বৃত্তাকার ভাবে অর্থাৎ ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দাঁতের চারপাশে মাজতে থাকবেন।
- এই অবস্থায় আপনার দাঁতের মাড়ির যেই গামলাইনগুলো রয়েছে সেখানে অতিরিক্ত কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
- এই পদ্ধতি অবলম্বন করে ধীরে ধীরে আপনার দাঁতের মাড়ি পরিষ্কার করার চেষ্টা করে যাবেন যেন কোনভাবেই দাঁতের মাড়িতে খোঁচা না লাগে।
- এইভাবে দাঁত মাজার কৌশল গুলো সম্পর্কে আপনি যদি ভালো করে জেনে নিতে পারেন তাহলে আপনার দাঁতের মাড়ির সমস্যা গুলো দূর হয়ে যেতে পারে।
দাঁত মাজায় ব্রাশ ব্যবহারের অভ্যাস
আপনার ছোট সময়ের অভ্যাস যদি আপনার মধ্যে ভালোভাবে গড়ে ওঠে তাহলে দাঁত মাজার পদ্ধতি যদি সঠিক থাকে তাহলে কোন ধরনের সমস্যা হয় না। কিন্তু আপনার যদি সঠিকভাবে দাঁত মাজার কোন ধরনের অভ্যাস না থাকে দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম না জানেন তাহলে সেটি মাড়ির খুবই বিপদ ডেকে আনতে পারে।
আপনি যদি খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করেন দেখতে পাবেন, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে আপনি যখন ব্রাশ করতে যান তখন ঠিক নিয়মিত যেভাবে ব্রাশ করেন সেভাবেই ব্রাশ করতে থাকেন। কিন্তু এটি কেন হয় কখনো কি চিন্তা করে দেখেছেন? আপনি যদি অনেক ভালোভাবে চেষ্টা করে দেখেন আপনি আপনার নিয়মিত অভ্যাস থেকে সহজে বের হয়ে আসতে পারবেন না।
আরও পড়ুনঃ দাঁতের ফিলিং করার খরচ কত দেখুন
কারণ প্রতিবারই আপনি যখন দাঁত ব্রাশ করতে যান তখন আপনি দাঁত ব্রাশ করার শুরুটা একইভাবে করে থাকেন যার ফলে এই অভ্যাস ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সহজে এটি থেকে আপনি বের হয়ে আসতে পারবেন না। কিন্তু আপনি যদি কোন দন্ত চিকিৎসকের কাছে যান তাহলে আপনার অভ্যাসকে পরিবর্তন করার জন্য যেকোনো ধরনের পরামর্শ দিতে পারেন।
কারণ প্রতিদিন যদি আপনি একই নিয়মে দাঁত মাজার চেষ্টা করেন তাহলে সেই একই নিয়মে দাঁত মাজা হবে। সেইক্ষেত্রে, দেখা যাবে আপনার কোন একটি দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার হয়েছে আবার কোন একটি দাঁতে ময়লা রয়েই গিয়েছে এবং পরবর্তীতে সেই ময়লা থেকে কোন ইনফেকশন হয়ে আপনার দাঁতের মাড়ির অনেক বড় ক্ষতি হয়।
দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম
আপনার দাঁতকে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম মেনে দাঁত মাজতে হবে। সঠিক নিয়ম মেনে দাঁত মাজার ফলে আপনার দাঁতের সহজে রোগ বাসা বাঁধবে না। দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম সম্পর্কে আসুন জেনে নিই।
- আপনি যখন খাবার খাবেন তখন অবশ্যই মুখকে খুব ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন।
- অবশ্যই আপনাকে সকালে এবং রাতে দুইবার দাঁত মাজার অভ্যাস করতে হবে।
- আপনাকে বেশি করে ফল এবং শাকসবজি খেতে হবে।
- আপনাকে মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে যা আপনার দাঁতের ক্ষয়কে রোধ করতে সাহায্য করবে।
- অম্ল জাতীয় খাবার খুব কম খেতে হবে।
- আপনার মুখে যদি ব্যাকটেরিয়া জাতীয় কিছু থাকে সেটিকে দূর করতে হলে চা খেতে পারেন।
- প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ হবে এইরকম খাবার আপনাকে খেতে হবে যেমন মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ ইত্যাদি।
- আপনার দাঁত মাজার টুথব্রাশ অন্তত তিন মাস পর পর বদলাতে হবে।
- আপনি যদি আপনার দাঁতের ক্ষয়কে প্রতিরোধ করতে চান তাহলে লিকুইড জাতীয় টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনার যদি ধূমপান করার অভ্যাস থাকে তাহলে সেটি ত্যাগ করার চেষ্টা করতে হবে।
- খাবারের পরে আপনার মুখের ভিতরে ময়েশ্চারাইজিং বজায় থাকার জন্য মিষ্টিহীন চুইংগাম চিবাতে পারেন।
- ধোঁয়াহীন তামাক খাওয়ার অভ্যাস থাকলে দাঁতকে ভালো রাখার জন্য গুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- নিয়মিত দাঁত মাজার চেষ্টা করে যেতে হবে এটি নিয়ে অবহেলা করা যাবে না।
দাঁত মাজায় কতক্ষণ চাপ প্রয়োগ করবেন
উপরের সবগুলো দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম দাঁত মাজার নিয়ম গুলো যখন আপনি ভালোভাবে জানবেন তখন টুথব্রাশের সাহায্যে আপনি দাঁতে মাজার সময় কতটুকু চাপ প্রয়োগ করবেন সেই বিষয়ে আপনাকে জানা থাকা লাগবে। আপনি যদি দাঁতের উপর অনেক বেশি চাপ প্রয়োগ করেন তাহলে সেটি কখনোই ভালো হবে না।
আরও পড়ুনঃ ভিটামিনের বিভিন্ন কার্যকারিতা সম্পর্কে ধারণা নিন
অবশ্যই আপনাকে দাঁতের উপরে বাড়তি চাপ দেয়া যাবে না। এতে আপনার দাঁতের উপরের যেই আস্তর রয়েছে সেগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যেতে থাকবে যার কারনে আপনি যখনই গরম জাতীয় কিছু বা ঠান্ডা জাতীয় কিছু খেতে যাবেন তখনই আপনার দাঁত শিরশির করে উঠতে পারে। আশা করছি দাঁত মাজায় কতক্ষণ চাপ প্রয়োগ করলে আপনার জন্য ভালো হবে সে বিষয়ে বুঝতে পেরেছেন।
দাঁতের ব্রাশ কেন পরিবর্তন করবেন
আপনি যদি একই দাঁত মাজার ব্রাশ ব্যবহার করতে থাকেন তাহলে একটা সময় পড়ে দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম না জানলে দাঁত মাজার ব্রাশটি অকেজো হয়ে যায়। তারপরেও যদি আপনি সেই ব্রাশটি দিয়ে দাঁত মাজার চেষ্টা করেন তাহলে দাঁতের মাড়িতে খোঁচা লেগে রক্তপাতও হতে পারে।
যদি আপনি উপরের সবগুলো নিয়মকে মেনে চলেন কিন্তু দাঁত মাজার ব্রাশকে পরিবর্তন না করার অভ্যাস থাকে তাহলে কখনোই আপনার দাঁতের সমস্যা দূর হবে না। প্রতিদিন যে দাঁত মাজার ব্রাশটি ব্যবহার করে যাবেন সেটি অবশ্যই তিন মাস পর পর বদলাতে হবে।
যদি আপনি তিন মাস পর পর দাঁত মাজার ব্রাশ না বদলান তাহলে ব্যাকটেরিয়া আপনার দাঁতের ফাঁকে জন্ম নিবে এবং ধীরে ধীরে আশেপাশের গামলাইন গুলোতেও বিস্তার লাভ করতে থাকবে যা পরবর্তীতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে।
দাঁতের সঠিক যত্নে কিছু করণীয়
আপনি যদি দাঁতের সঠিক যত্ন নিতে না পারেন তাহলে দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম না জানলে আপনাকে অনেক বেশি দাঁতের সমস্যায় ভুগতে হবে। কারণ সঠিক যত্ন ব্যতীত দাঁত ভালো রাখার কোন সুযোগ নেই। দাঁতের সঠিক যত্নে কিছু করণীয় ভূমিকা রয়েছে যেমন,
- আপনি যদি দাঁতের মাড়িতে খুব শক্ত ভাবে আঘাত করেন তাহলে রক্ত ঝরতে পারে তাই নরম যেই ব্রাশগুলো রয়েছে সেগুলো দিয়ে দাঁত মাজায় ব্যবহার করতে পারেন।
- নিয়মিত দুধ খাওয়ার চেষ্টা করুন কারণ দুধে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে আপনার দাঁতকে মজবুত রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
- আপনি যখনই দাঁত ব্রাশ করতে যাবেন অবশ্যই মুখে মাউথওয়াশ ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
- আপনি যেই টুথব্রাশটির ব্যবহার করবেন সেটি যেন অবশ্যই গাম লাইনের আশেপাশে বাঁকাতে পারেন।
- কারণ কোমল পানিও এবং চিনি যুক্ত খাবার আপনার দাঁতে যখন লেগে থাকে তখন আপনার দাঁতের ক্ষয় হতে পারে সেইক্ষেত্রে ভেতরে এবং বাহিরে বাঁকানো যায় সেই রকম টুথব্রাশ ব্যবহার করতে হবে।
- সেই সাথে অবশ্যই আপনাকে আরেকটি কাজ করতে হবে যা হচ্ছে মুখের মাড়ির দাঁত মাজার পাশাপাশি আপনার জিহ্বাকে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন।
শেষকথা
এই পোস্ট থেকে আপনি দাঁতের সুস্থতায় দাঁত মাজার সঠিক ১০ নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারলেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পড়ে উপকার পেয়ে থাকেন তাহলে নিচের অংশে মন্তব্য করে আমাদের পাশেই থাকুন আশেপাশের সকলকে এই বিষয়ে অবগত করুন। ২৫২৭৫
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url