বন্যা মোকাবেলায় আমাদের করণীয় কি?
সেখানে বলা হয়, দুর্যোগকালে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে ঠাণ্ডা মাথায়। বন্যায় বাড়িঘর ডুবে গেলে বা বাড়িতে বসবাস করা সম্ভব না হলে বাড়ির কাছাকাছি কোথাও অবস্থান নিতে হবে।
দেশে প্রতিবছরই ছোট থেকে মাঝারি আকারের বন্যা হয়ে থাকে। এবারও বিভিন্ন জেলার মানুষ এই দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করছে।
বন্যার সময় নিরাপদ থাকতে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘বন্যা মোকাবেলায় জনসাধারণের করণীয়’ শীর্ষক পুস্তিকায় এই পরামর্শগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
পোস্ট সূচিপত্র:
- বন্যার সময় আমাদের কি করা উচিত?
- বন্যা কিভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব?
- বৃক্ষ কিভাবে বন্যা প্রতিরোধ করে?
- বন্যা নিয়ন্ত্রণে সাধারণ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত কি কি?
- বন্যা নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম পন্থা কোনটি?
- শেষ কথা
বন্যার সময় আমাদের কি করা উচিত?
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজের পর নিয়ম মাফিক হাত ধুতেও ভুলবেন না। পুরোপুরি শুষ্ক না করে চুলা ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার করবেন না। মশারি ব্যবহার করুন। দেখে নিন, বিছানায় বা চলার পথে কোনো সরীসৃপ আশ্রয় নিয়েছে কি না
বন্যার সময় নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু মূল পদক্ষেপ যা আপনাকে বন্যার সময় নিতে হবে:
নিরাপদ স্থানেই থাকুন: যদি সম্ভব হয়, বন্যার সময় নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করুন। উচ্চ জায়গায় উঠে যান এবং নিম্নাঞ্চলে না যান।
তথ্য নিন: আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা শুনুন। রেডিও বা টেলিভিশনের মাধ্যমে আপডেট রাখুন।
বনভেজা থেকে বাঁচুন: কেবলমাত্র ত্রাণকর্মী বা জরুরি কর্মীদের অনুমতি দেওয়া স্থানে যান। ভেসে যাওয়া পানিতে পা দেবেন না; এটি খুব বিপজ্জনক হতে পারে।
জরুরি সরঞ্জাম প্রস্তুত করুন: একটি জরুরি কিট তৈরি করুন যাতে মুদ্রা, ওষুধ, খাদ্য, পানি, টর্চলাইট এবং ব্যাটারি থাকে।
মোবাইল ফোন চার্জ করুন: মোবাইল ফোন চার্জ করে রাখুন যাতে জরুরি যোগাযোগ করতে পারেন।
বাড়ি ত্যাগ করুন যদি নির্দেশনা থাকে: যদি স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়, তাহলে তা অনুসরণ করুন।
পানি দূষণ এড়িয়ে চলুন: বন্যার পানি পান বা ব্যবহারের আগে পরিষ্কার নিশ্চিত করুন।
বাচ্চা ও বৃদ্ধদের বিশেষ যত্ন নিন: ছোট শিশু এবং বৃদ্ধদের নিরাপত্তা বিশেষভাবে নিশ্চিত করুন।
এছাড়াও, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে, বন্যার আগেই নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করা ভালো।
বন্যা কিভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব?
কাঠামোগত পদ্ধতি বন্যা নিয়ন্ত্রণের কিছু পদ্ধতি প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত আছে। এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত জল ধরে রাখার জন্য গাছপালা রোপণ, নিচের দিকে প্রবাহকে ধীর করার জন্য পাহাড়ের ধারে সোপান তৈরি করা , এবং বন্যার রাস্তা নির্মাণ (বন্যার জল সরানোর জন্য মানবসৃষ্ট চ্যানেল)।
বন্যা প্রতিরোধ করার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন এবং অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয় করে কাজ করলে বন্যার প্রতিকারের পথ আরও সুগম হতে পারে, এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করা হলো:
অবকাঠামো উন্নয়ন:
নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে বাঁধ নির্মাণ এবং উন্নয়ন।
পানি প্রবাহের জন্য কার্যকরী ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
দৃষ্টি আকর্ষণকারী এলাকা যেখানে বন্যার ঝুঁকি বেশি, সেখানে পরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ।
প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা:
বনভূমি পুনরুদ্ধার করা, যেমন ম্যানগ্রোভ বন ও অন্যান্য বনভূমি যা ভূমি ক্ষয় কমাতে সহায়তা করে।
নদী ও জলাশয়গুলির পরিবেশ সংরক্ষণ করা, যাতে তাদের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
বাস্তুতন্ত্রের উন্নয়ন:
নদী শাসন ও বন্যার পানি সংরক্ষণের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ।
উচ্চমানের পানি সঞ্চয় প্রকল্প তৈরি করা, যেমন বাঁধ ও জলাধার।
জানমতে প্রচার:
জনগণকে বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণের মাধ্যমে প্রস্তুত রাখা।
বন্যার পূর্বাভাস ও তথ্যের ব্যবস্থা উন্নত করা।
যথাযথ পরিকল্পনা:
বন্যা ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলিতে পরিকল্পিত স্থাপনা ও বসবাস।
এলাকা ভিত্তিক বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করা।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া:
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নীতি ও কৌশল গ্রহণ করা।
বৃক্ষ কিভাবে বন্যা প্রতিরোধ করে?
গাছ - বন্যার ঝুঁকি কমায়
গাছের শিকড়গুলি জলকে ভিজিয়ে রাখে, নদীতে যাওয়ার জন্য কম ছেড়ে দেয়। গাছের শিকড়ও নদীতে মাটি ক্ষয় হতে বাধা দেয়। নদীতে বেশি মাটি মানে বৃষ্টি হলে পানি ধরে রাখার জায়গা কম – এটি নদীর পাড় উপচে পড়া সহজ করে তোলে, বনের ভেষজ, গুল্ম এবং গাছগুলি তাদের শিকড় দ্বারা শীর্ষ স্তরটিকে শক্তভাবে ধরে রাখে। এটি বায়ু এবং জলের মতো প্রাকৃতিক শক্তিকে মাটির উপরের সবচেয়ে উর্বর স্তরটি সহজেই বহন করতে দেয় না । রেইনফরেস্ট গাছের শিকড় এবং গাছপালা মাটিকে নোঙ্গর করতে সাহায্য করে, এখন বছরে তিন থেকে চারবার বন্যা হয়৷ আগে একবার বন্যা হতো বছরে৷ এখন মৌসুম যা-ই হোক, বন্যা হবেই৷ আমি মনে করি, এটা খনির প্রভাব৷ বন উজাড় করা হয়েছে৷ তাই মাটি আর পানি শোষণ করে না৷ যখন অনেক বৃষ্টি হয়, তখন বন্যা হয়৷''
বেশি করে গাছ লাগালে বন্যার প্রভাব কিছুটা কমবে৷ এই অঞ্চলে এরই মধ্যে কোটি খানেক নতুন গাছ লাগানো হয়েছে৷ এর কিছু কেটে কাঠ হিসেবে বিক্রি করা হবে এবং সেগুলোর জায়গায় নতুন গাছ লাগানো হবে৷ আইডিয়া হলো বোর্নিওতে ব্যবসা আকৃষ্ট করে চাষীদের সাহায্য করা৷
মোনালিসার ভাষায়, ‘‘ইন্দোনেশিয়ায় কাঠ শিল্প এখনো জাভাকেন্দ্রিক, তাই না? আমরা এই শিল্পোদ্যোক্তাদের কালিমানতানে বিনিয়োগ করার আহ্বান করছি৷ অথবা চাষীদের এই শিল্পে সরাসরি যুক্ত হতে সাহায্য করছি, যেন কোনো মধ্যসত্ত্বভোগী না থাকে৷ এই সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা চাষীদের সর্বোচ্চ লাভের সুযোগ করে দিতে চাইছি৷'
বন্যা নিয়ন্ত্রণে সাধারণ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত কি কি?
নদী খননের মাধ্যমে পানি পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা
নদী শাসন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা
নদীর দুই তীরে বনাঞ্চল সৃষ্টি করা
বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা
কাঠামোগত বন্যা নিয়ন্ত্রণ হল জলাধার, লেভি, ড্রেজিং এবং ডাইভারশনের মতো ভৌত সমাধান ব্যবহার করে বন্যার প্রভাব হ্রাস করা। অ-কাঠামোগত বন্যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে যেমন ভূমি-ব্যবহারের পরিকল্পনা, উন্নত সতর্কতা ব্যবস্থা এবং বন্যা বীমা।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বলতে বন্যার জলপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিরোধ বা হ্রাস করার জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলিকে বোঝায়। বন্যা লাঘব (Flood relief) পদ্ধতিগুলি বন্যার পানি বা উচ্চ জলপ্রবাহের প্রভাব হ্রাস করতে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক কারণ যেমন উজানের চরম আবহাওয়ার পাশাপাশি মানুষের দ্বারা জলাশয় ও বৃষ্টি গড়ানো পানির গতিপথ পরিবর্তনের কারণে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলির কাঠামোভিত্তিক ও কাঠামোবিহীন এই দুইভাগে ভাগ করা হয়। কাঠামোভিত্তিক পদ্ধতিগুলি বন্যার পানিকে আক্ষরিক অর্থে প্রতিরোধ করে। বন্যা প্রতিরোধের জন্য শক্ত অবকাঠামো নির্মাণ (যেমন বন্যা প্রাচীর) বন্যা ব্যবস্থাপনায় কার্যকর হয়ে থাকে। তবে ভূদৃশ্য প্রকৌশল শাস্ত্রের অভ্যন্তরে সেরা চর্চা হিসেবে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি সামাল দেওয়ার জন্য কোমল অবকাঠামো ও প্রাকৃতিক ব্যবস্থার (যেমন জলাভূমি, প্লাবনভূমি) উপর নির্ভরশীলতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপকূলীয় বন্যা প্রতিরোধ বা সামাল দেওয়ার জন্য উপকূল ব্যবস্থাপনার চর্চাগুলিকে জোয়ারভাটার মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সমুদ্রসমতলের উচ্চতাবৃদ্ধিকেও গণনায় রাখতে হয়।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও লাঘব জলবায়ু পরিবর্তন উপযোজন ও জলবায়ুজনিত ঘাতসহিষ্ণুতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমুদ্র সমতলের উচ্চতাবৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্রুত ও তীব্র বৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই বিশ্বব্যাপী এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
বন্যা নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম পন্থা কোনটি?
প্রাচীনকাল থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণের যে মৌলিক পদ্ধতিগুলি চর্চিত হয়ে আসছে, সেগুলি হল উজানে বনায়ন (যাতে বৃক্ষ আচ্ছাদনের কারণে ভূমিক্ষয় হ্রাস পায় ও পানির স্রোত দ্রুত ভাটিতে নেমে না আসে), নদীর তীর ঘেঁষে বেড়িবাঁধ (Dyke ডাইক বা Levee লেভি), বন্যাপ্রাচীর (Floodwall ফ্লাডওয়াল), সমুদ্রপ্রাচীর (Seawall সি-ওয়াল), বাঁধ (Dam ..
বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সর্বোত্তম পন্থা বলতে গেলে, এটি একটি комплекс পদ্ধতি হতে হবে যা বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে বাস্তবায়িত হয়। বাস্তবায়ন বন্যার ঝুঁকি কমাতে এবং এর প্রভাব মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে। মোটকথা, একটি আন্তঃবিভাগীয় এবং ব্যাপক পন্থা গ্রহণ করা উচিত যাতে সমস্ত সম্ভাব্য দিক বিবেচনায় নিয়ে কার্যকরী সমাধান বের করা যায়।
এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পন্থা নিম্নরূপ:
বাঁধ এবং ড্যাম নির্মাণ: নদীর পানি ধরে রাখার জন্য বাঁধ এবং ড্যাম নির্মাণ করা। কিন্তু এগুলোকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।
ড্রেনেজ সিস্টেম: শহর এবং গ্রামীণ এলাকাগুলিতে কার্যকরী ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাতে অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হয়।
বনভূমি পুনরুদ্ধার: বনভূমি ও বৃক্ষ রোপণ করে মাটি ক্ষয় রোধ করা এবং জল শোষণের ক্ষমতা বাড়ানো।
ম্যানগ্রোভ বন এবং জলাভূমি সংরক্ষণ: উপকূলীয় এলাকা এবং নদীর তীরের ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণ করা যা বন্যার প্রভাব কমাতে সহায়তা করে।
বন্যা প্রস্তুতি পরিকল্পনা: এলাকায় বন্যা পূর্বাভাস, সতর্কতা ব্যবস্থা এবং জরুরি প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা গড়ে তোলা।
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নীতি গ্রহণ করা, যা বন্যার পরিমাণ এবং তীব্রতা কমাতে সহায়তা করে।
জনসাধারণের সচেতনতা: জনগণকে বন্যা ঝুঁকি, প্রস্তুতি এবং প্রতিকার সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করা।
বন্যা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা: প্রযুক্তি ব্যবহার করে পূর্বাভাস প্রদান এবং জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত রাখা।
ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা: বন্যার ঝুঁকিতে থাকা এলাকায় পরিকল্পিতভাবে ভূমি ব্যবহার করা, যেমন উচ্চস্থানে নির্মাণ করা এবং বন্যা প্রবণ অঞ্চলে সীমিত উন্নয়ন।
শেষ কথা
বন্যা নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ, যা সঠিক পরিকল্পনা, কার্যকরী অবকাঠামো, প্রাকৃতিক উপাদান সংরক্ষণ, এবং জনসচেতনতা সহ একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্ভব। প্রকৃতি এবং প্রযুক্তির সমন্বয়ে, সামগ্রিকভাবে একযোগে কাজ করে আমাদের বন্যার ক্ষতি কমানো সম্ভব। সচেতনতা, প্রস্তুতি, এবং সতর্কতার মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ ও সুরক্ষিত করা সম্ভব।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url