গর্ভ অবস্থায় কি পুষ্টিকর খাওয়ার খাওয়া উচিত
মা হতে চলেছেন, এজন্য আপনাকে অভিনন্দন! অনাগত সন্তান নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে মনে অনেক প্রশ্নও আসছে। তার মধ্যে একটি বিষয় সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তা হলো: আমার কী খাওয়া উচিত? জীবনের সব পর্যায়েই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এটা বিশেষভাবে জরুরি। সুষম খাবার আপনার সন্তানের বেড়ে ওঠা, তার বিকশিত হওয়া এবং সঠিক ওজন বজায় রাখতে সহায়তা করবে। পরিবারের নতুন সদস্যের কল্যাণের জন্য কীভাবে আপনার খাবার তালিকায় পরিবর্তন আনবেন, তা জানতে আমাদের টিপসগুলো দেখুন।
১ মাস থেকে ৩ মাসের গর্ভবতীর খাবার তালিকা
গর্ভকালীন সময়ের প্রথম তিন মাসে তেমন একটা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না।
এসময়ে আপনার খাবার তালিকা তথা ক্যালরির চাহিদা আপনার উচ্চতা, ওজন ও দৈনন্দিন শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণসহ বেশ কিছু জিনিসের ওপরে নির্ভর করবে। ওজন বাড়তে থাকলে সেই অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ কমিয়ে এবং ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়িয়ে স্বাভাবিক ওজনে আসার চেষ্টা করতে পারেন।
আবার ওজন কমতে থাকলে ব্যায়াম স্বাভাবিক রেখে খাবারের পরিমাণ কিছুটা বাড়িয়ে দিতে পারেন। এসব বিষয়ে একজন রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন। তিনি আপনার জন্য বিশেষভাবে খাবার তালিকা প্রস্তুত করতে সাহায্য করতে পারবেন।
গর্ভবতী নারীর সারাদিনের খাবার তালিকার একটি নমুনা নিচে তুলে ধরা হয়েছে। এই তালিকাটি ১৮০০ ক্যালরির। উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, গর্ভধারণের আগের ওজন ৫৫ কেজি ও সপ্তাহে ২–৩ দিন হালকা ব্যায়াম করেন এমন নারীর জন্য এই তালিকাটি প্রযোজ্য।
উল্লেখ্য, এই তালিকার খাবারগুলো রান্না করার সময়ে প্রয়োজনে সীমিত পরিমাণে তেল ব্যবহার করা হয়েছে। অতিরিক্ত রান্নার তেল ব্যবহার খাবারের পুষ্টিগুণ তেমন না বাড়ালেও ক্যালরির পরিমাণ বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দিতে পারে।
প্রোটিনযুক্ত খাবার
গর্ভাবস্থায় প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন ডিম, মাংস, মাছ, বিনস, পাঁচমিশালি ডাল, সিড নিয়মিত খেলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ভালো হবে।
মাছ: স্যামন, টুনা, ম্যাকারেল ইত্যাদি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য খুবই জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থায় সপ্তাহে দুইবারের বেশি মাছ খায় তাদের সন্তানের বুদ্ধিমত্তা বা আইকিউ বেশি হয়।
আরো পড়ুন: পেটে ব্যথা হলে কি করবেন - পেট ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা
ডিম: ডিম অ্যামিনো এসিড কোলিন সমৃদ্ধ। যাতে মস্তিষ্কের গঠন ভালো হয় ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী নারীদের দিনে অন্তত দুটো করে ডিম খাওয়া উচিত যার থেকে কোলিন মেলে। ডিমে থাকা প্রোটিন ও আয়রন জন্মের সময় ওজন বাড়িয়ে দেয়।
আয়োডিন: আয়োডিনের অভাব, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহে সন্তানের আইকিউ কম করে দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় আয়োডিনযুক্ত লবণ খান। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দই ইত্যাদি খেতে পারেন।
ভিটামিন ডিযুক্ত খাবার
পনির, গরুর মাংস, কলিজা—এই জাতীয় খাবারে প্রচুর ভিটামিন ডি থাকে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে ভিটামিন ডির অভাব হলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সঠিকভাবে হয় না। এ জন্য গর্ভবতী মাকে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত সূর্যের আলোয়ও কিছু সময় করে থাকতে হবে। খাদ্যতালিকায় দুধ বা দইও রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় টক ফল খাওয়া যাবে কি?
গর্ভাবস্থায় নারীর শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন ঘটে থাকে। ...
গর্ভাবস্থায় না ধোয়া বা খোসা ছাড়ানো ফল ও সবজি খাওয়া যাবে না। ...
কারণ উৎপাদন, ফসল কাটার সময়, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন বা খুচরা বিক্রির সময় যে কোনো ধরনের দূষণ ঘটতে পারে।
টক্সোপ্লাজমা হলো একটি পরজীবী যা ফল কিংবা সবজিতে থাকতে পারে।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি সত্যিই গর্ভপাত হয়
কুসুম খেলে বাচ্চার এক থেকে কেড় ঘণ্টা খিদে পাবে না। সাত-আট মাস ডিমের সাদা অংশ খাওয়াবেন যাতে অ্যালবুমিন থাকে; এর বিকল্প পৃথিবীতে আর তৈরি হয়নি। ছোটবেলা থেকেই ড্রাই ফ্রুট যেমন চেরি, খেজুর, কিশমিশ, পাম ফ্রুট খেলে ক্যালোরির চাহিদা পূরণ হয়। মুরগি থেকে মাছের দিকে বেশি জোর দেবেন। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড মাছে থাকে। মাছ ভেজে বা ভুনা করে হালকা বেক করে বাচ্চাকে খাওয়াবেন, ভালো তেলে ওমেগা ৩ ও ৬ ফ্যাটি এসিড থাকে। এক চা চামচ ঘি সপ্তাহে এক বা দুই বার ব্যবহার করবেন। ব্রেনের কর্মক্ষমতা জেনেটিক বিষয়ের ওপরও নির্ভর করে এবং বাচ্চা তার বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঘুমাবে।
Pregnancy
Pregnancy তে অতিরিক্ত ওজন না বাড়িয়ে, কি কি খাবেন কিভাবে খাবেন সেই বিষয় এ একজন অভিজ্ঞ ডায়াটিশিয়ান এর পরামর্শ গ্রহণ করুন। সন্তান যেন বুদ্ধিমান ও মেধাবী হয়- এ প্রত্যাশা সব বাবা-মায়েরই থাকে। এ কারণেই গর্ভবতী নারী শিশুর কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চলেন। পুষ্টিকর খাবারের অভাবে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আবার জন্ম নেওয়া শিশু পরর্তিতে নানা সমস্যায় ভুগতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কী খাবেন না
গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে কী খাবেন সেটা জানার পাশাপাশি কী খাবেন না সেটা জানাও জরুরি।
গর্ভাবস্থার এই সময়ে অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা বা কফি কম খেতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গর্ভপাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
এই সময় সামুদ্রিক মাছ কম খেয়ে মিঠা পানির মাছ খাবেন৷ কারণ সামুদ্রিক মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকায় ভ্রুণের মস্তিষ্কের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
আধা সেদ্ধ ডিম বা মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ ডিম ও মাংসে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া, লিস্টেরিয়া, ইত্যাদি থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক দিকে গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন ভালোভাবে রান্না করে খাবেন। ডিমের পোচ, হাফ বয়েলড ডিম বা আধসেদ্ধ মাছ, মাংস একদমই খাবেন না। আনারস, কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে।
জিংক
শরীরের কোষ গঠনের জন্য জিংক জরুরি। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ১১ মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন। তাই এই সময় সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ডাক্তার আপনাকে জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেবেন।
এ ছাড়া আপনার খাদ্যতালিকায় জিংকসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডাল, ছোলা, ডিম, আমন্ড, কাজু, চিনা বাদাম, শিমের বিচি, মুরগির মাংস, গরুর মাংস,দুধ ইত্যাদি রাখতে হবে।
ক্যালসিয়াম
গর্ভাবস্থায় শিশুর হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে শরীর মায়ের হাড় থেকে গর্ভের শিশুর শরীরে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করবে। ফলে মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যা দেখা দেবে। তাই এই সময় মায়ের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে হবে। যেমন- দুধ, দই, পনীর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, কাঁটাযুক্ত মাছ, টফু, পালং শাক, ডুমুর, চিয়াসিড, ডিম, তিল, তিশি, আমন্ড ইত্যাদি। ক্যালসিয়ামের শোষণের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন সকালে অন্তত ১০-১৫ মিনিটের জন্য শরীরে রোদ লাগান।গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রথম ৩ মাস ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি ১ হাজার মিলিগ্রাম করে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে।
ফলিক এসিড
গর্ভাবস্থায় প্রথম ১৩ সপ্তাহে ফলিক এসিড বা ফোলেট সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফলিক এসিড হলো এক ধরনের বি ভিটামিন। প্রথম কয়েক সপ্তাহে ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং সঠিক পরিমাণে ফলিক এসিড গ্রহণ এই আশঙ্কা প্রায় ৭০ শতাংশ কমিয়ে দেয়৷ তাই এই সময় অবশ্যই আপনার ডাক্তারের পরামর্শ মেনে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে সঠিক মাত্রায় ফলিক এসিড গ্রহণ করতে হবে৷ ফলিক এসিডসমৃদ্ধ খাবার আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে৷ যেমন আখরোট, পেস্তা বাদাম, ডিম, ছোলা, মুগ, ব্রকলি, সূর্যমুখী বীজ, চিয়া সিড, শতমূলী, কমলালেবু ইত্যাদি।
আয়রন
আমাদের দেশে মেয়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। আয়রনের ঘাটতি হলে গর্ভের শিশুর শরীরে অক্সিজেন কম পৌঁছায়। ফলে শিশুর গঠন ও বৃদ্ধি বিঘ্নিত হয় এবং সময়ের আগেই শিশু জন্ম নেওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই এই সময় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন পালং শাক, ডিম, মুরগির মাংস, ছোলা, খেজুর, কলা ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। মনে রাখবেন, প্রাণিজ উৎসের তুলনায় উদ্ভিজ উৎস থেকে পাওয়া আয়রন গ্রহণ করা বেশি ভালো।
ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণ বৃদ্ধি করে। তাই আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়ার সঙ্গে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার, যেমন লেবু, কমলালেবু, আমলকি, আঙুর, আপেল ইত্যাদি খেতে হবে
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না।
১। করলাঃ
মানুষের স্বাস্থের জন্য করলা খুব গুরুত্বপুর্ন হলেও, গর্ভাবস্থায় করলা ক্ষতির কারন হতে পারে। করলায় থাকা গ্লাইকোলাইসিস, সেপোনিক, , মারোডিসিন নামক পদার্থ গর্ভবতী মহিলার অনেক ধরনের উপসর্গের সৃষ্টি করে ৷ ক্ষতি হতে পারে গর্ভজাত সন্তানেরও ৷
২। কাচাঁপেপেঃ
গর্ভাবস্থায় কাঁচা অথবা আধাকাঁচা পেঁপে না খাওয়াই ভালো। পেপে অন্যান্ন সময় দেহের জন্য পুষ্টিকর সবজি হিসেবে বিবেচিত হলেও গর্ভাবস্থায় তা হতে পারে নানাবিধ সমস্যার কারন। কাঁচা পেঁপেতে উচ্চমাত্রায় ল্যাটেক্স থাকে। আমেরিকান গবেষকদল ইঁদুরের ওপর করা গবেষণা করে দেখেন যে, ল্যাটেক্স জরায়ুর শক্তিশালী পেশি ও গ্রন্ধি সংকোচন করে থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কাঁচা পেঁপে খেলে সেটি গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ না-ও হতে পারে। উল্লেখ্য, পাকা পেঁপে খেতে কোনো সমস্যা নেই। পাকা পেঁপে ভিটামিন সি-সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের একটি ভালো উৎস।
৩। অঙ্কুরিত বীজ, খাদ্যশস্য ও শিমঃ
রান্না না করা অঙ্কুরিত বীজ, খাদ্যশস্য ও শিম গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্য ও সন্তানের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই সকল বীজ গর্ভকালীন সময় না খাওয়াই উত্তম।
৪। কাঁচা মূলাঃ
কাঁচা মূলা, এবং রেডি-টু-ইট সালাদ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এগুলোতে লিসটেরিয়া, সালমোনিলা ও ই. কোলির মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
৫। সজিনাঃ
সজিনাতে রয়েছে ’আলফা সিটেস্টেরল’ নামক এক ধরনের উপাদান। যা অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাতও ঘটাতে পারে। জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর সবজি হলেও তাই গর্ভকালীন সময়ে সজিনা না খাওয়াই ভালো।
৬। অ্যালোভেরাঃ
গর্ভকালীন সময়ে অ্যালোভেরা খাওয়া উচিত নয়। অ্যালোভেরার খাদ্য উপাদান সমুহ গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটাতে পারে। আমরা অনেকেই সৌন্দর্যচর্চার জন্য বা পেট পরিষ্কার রাখার জন্য নিয়মিত অ্যালোভেরা জুস খেয়ে থাকি। তবে মা ও সন্তানের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে গর্ভাবস্থায় অ্যালোভেরা পরিত্যাগ করা উচিত।
৭। বেগুনঃ
মাছের তরকারি রান্না করেছেন? বেগুন ছাড়া হয়তো ভাবাই যায় না। কিন্তু যাদের শরীর এ এলার্জি রয়েছে বেগুন তাদের প্রত্যাক্ষ শত্রু। শুধু এলার্জি রোগী নয়, গর্ভাবস্থায় ও বেগুন আনেক সময় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে। গর্ভবতী নারীরা যদি বেগুন খায় তাহলে ঋতুস্রাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মজাদার সবজি হলেও হাতের নাগালে পাওয়া বেগুনে প্রচুর পরিমানে ফাইটোহরোমনস থাকে, তাই বেগুন এ অবস্থায় ক্ষতিকর। তাছাড়া বেগুন চামড়ার ক্ষতি করে এবং এলার্জির সমস্যা করে, তাই না খাওয়া ভালো।
গর্ভকালীন সময়ে সুষম খাবারের গুরুত্ব
গর্ভকালীন সময়ে আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভকালের বাড়তি পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করে আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। গর্ভের শিশুর উপযুক্ত গঠন ও বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা প্রতিরোধে একটি সুষম খাবার তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভবতী হওয়ার জন্য কোন ফল ভালো?
বেরি: স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি এবং ব্লুবেরিগুলিতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট রয়েছে যা উর্বরতা বাড়ায়। 7. কিউই: কিউই হল একটি পুষ্টিকর-ঘন ফল যার উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি রয়েছে, যা আয়রন শোষণে সাহায্য করে এবং উন্নত উর্বরতার দিকে পরিচালিত করে।
শর্করা জাতীয় খাবার
আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস হলো শর্করা জাতীয় খাদ্য। এ ছাড়াও শর্করা জাতীয় খাবারে ভিটামিন ও আঁশও পাওয়া যায়। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরির চাহিদা মেটাতে খাবার তালিকায় শর্করা থাকা অপরিহার্য। কিছু শর্করা জাতীয় খাবার হলো—
ভাত
রুটি
আলু
সিরিয়াল বা কর্ন ফ্লেকস
নুডলস ও পাস্তা
ভুট্টা
ওটস
তবে প্রক্রিয়াজাত শর্করা (যেমন: সাদা চাল ও আটা) খাওয়ার চেয়ে গোটা শস্য দানা (যেমন: লাল চাল ও লাল আটা) ও খোসাসহ আলু খাওয়া ভালো। এতে করে খাবারের পুষ্টিমান ও আঁশের পরিমাণ অটুট থাকে। আঁশ গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্যসহ বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। শর্করাজাতীয় খাবারের চাহিদার অন্তত অর্ধেক এসব গোটা শস্য দানা দিয়ে পূরণ করার চেষ্টা করবেন।
৪ মাস থেকে ৯ মাসের গর্ভবতীর খাবার তালিকা
গর্ভের শিশুর বেড়ে ওঠার সাথে সাথে গর্ভবতী নারীর খাবারের চাহিদাও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তাই গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের পর থেকে খাওয়াদাওয়ার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বাড়াতে হয়। একজন স্বাভাবিক ওজনের ৪ মাস থেকে ৬ মাসের গর্ভবতীর প্রথম তিন মাসের চেয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৪০ ক্যালরি পরিমাণ অতিরিক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে একজন স্বাভাবিক ওজনের ৭ মাস থেকে ৯ মাসের গর্ভবতীকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত প্রায় ৪৫০ ক্যালরির খাবার খেতে হবে। তবে আপনার ওজন বেশি হলে আরেকটু কম পরিমাণে অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে। এই বিষয়ে আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে বিস্তারিত পরামর্শ নিন।
অতিরিক্ত খাবারের চাহিদা পূরণে প্রতিদিন তিন বেলার খাবার খাওয়ার পাশাপাশি দিনে আরও দুই বার হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। খাবারটি হতে পারে একটি ফল, ৫–৬টি বাদাম অথবা আধা কাপ টক দই। এ ছাড়াও ক্ষুধা লাগলে আপনি যেকোনো সময়েই পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
খাবারে ক্যালরির হিসেব কীভাবে আন্দাজ করবেন?
বাচ্চার Brain development
সাধারণত মায়ের গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ২৫% Brain Development ঘটে। তাই গর্ভাস্থায় মা কি খাবে তার একটা নিদিষ্ট তালিকা অাগে থেকেই প্রস্তুত করতে হবে ।আমাদের পরিবেশ ও খাদ্যাভাসের পরিবর্তনের কারণে অভিভাবকরা প্রায়ই তাদের বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তিত থাকেন কীভাবে বাচ্চা ব্রেনি হবে। প্রথমত চিন্তা করতে হবে গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যতালিকা কেমন ছিল কারণ গর্ভের সময় ভ্রণের মস্তিষ্কের ২৫ ভাগ ডেভেলপ হয়ে যায়, খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ, ডিম, দুধ থাকতে হবে। বাদাম বাচ্চা ও যে কোনো বয়সের আইকিউ লেভেল বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয়।
আরো পড়ুন: মহিলাদের কোমর ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
জন্মের পর শিশু যখন মায়ের দুধ খায় তখন প্রসূতির খাদ্যের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে কারণ এ সময় মস্তিষ্কের বাকি ৭৫ ভাগ অংশ ডেভেলপ হয়ে যায়। সপ্তাহে দু’দিন অয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ খাবেন যা বাচ্চার আইকিউ তীক্ষ্ণ করে। জন্মের ৬ মাস পর বাচ্চাকে দুধ ও দুধের তৈরি খাবার, সুজি, সেমাই, সাগুতে বাদাম গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়ালে বাচ্চার মেধা শানিত হয়। ধীরে ধীরে খাবারের পরিমাণ ও ধরন বাড়ালে বাচ্চার পরিপাকতন্ত্র শক্তিশালী হয়। খিচুড়ির সঙ্গে প্রথমে ডিমের কুসুম যাতে প্রোটিন ও কোলিন থাকে যা নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে। ডিমে বি কমপ্লেক্স থাকে। ডিমের কুসুম এক আউন্স পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় বিভিন্নভাবে ডিম খেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে যেন সেটি পুরোপুরি সিদ্ধ বা রান্না হয়। দুধের ক্ষেত্রে পাস্তুরিত দুধ বেছে নিতে হবে। এই বিষয়ে আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আপনার গর্ভে যমজ অথবা একসাথে দুইয়ের বেশি বাচ্চা থাকলেই যে আপনাকে সে অনুযায়ী বেশি করে অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে, এমনটা নয়। সাধারণত গর্ভে যমজ শিশু থাকলে দৈনিক প্রায় ৬০০ ক্যালরি সমমানের বাড়তি খাবার খেতে হয়। আর একত্রে তিনটি সন্তান গর্ভধারণ করলে দৈনিক প্রায় ৯০০ ক্যালরি অতিরিক্ত খাবার খেতে হয়।
উপসংহার
আমাদের আজকের আর্টিকেল গর্ভ অবস্থায় কি পুষ্টিকর খাওয়ার খাওয়া উচিত, পরিশেষে এ কথা স্পষ্ট যে, গর্ভকালীন সময় অন্য যে কোন সময় থেকে স্পর্শকাতর। এই সময়ে জীবনযাত্রাতে যেমন পরিবর্তন জরুরি তেমনি উপরে উল্লেখিত খাদ্য সবজি গ্রহনেও বিরতি আনা গুরুত্বপুর্ন। আমাদের সকলের কাঙ্খিত সুস্থ মা ও সন্তানের জন্য যে কোন প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং সুস্থ থাকুন। গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্য সম্পর্কিত আপনার যে কোন প্রশ্ন বা গুরুত্বপুর্ন মূল্যায়ন থাকলে, আমাদের বিশেষজ্ঞ টিম বরাবর প্রশ্ন করতে পারেন কমেন্ট বক্সে র মাধ্যমে। চেষ্টা করবো আপনাদের কে, যথাযথ উত্তর দেওয়ার। আমি প্রতিদিন এই ওয়েবসাইটে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কন্টেন্ট পাবলিশ করে থাকি, আপনাদের যদি ভালো লাগে আমার ওয়েবসাইট থেকে যদি উপকৃত হন ,আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখুন
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url