আদা দিয়ে মুখের কালো দাগ তোলার উপায় কি

সুন্দর মসৃণ ও উজ্জ্বল ত্বক সকলেরই কাম্য। তবে দৈনন্দিন জীবনের কর্মব্যস্ততা, সানবার্নসহ ধুলো-বালি ত্বককে আরো রুক্ষ করে তোলে। যার ফলে ত্বকে দেখা দেয় ব্রণ ও কালচে দাগ। তবে ত্বকের এই সমস্যা সমাধান করতে পারে আদা! প্রাকৃতিক এই উপাদানে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ডার্ক স্পট ও বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে আদায় অ্যান্টি-মাইক্রোবাআল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টিস রয়েছে যা ত্বকের যেকোন ধরনের সমস্যা সমাধান করতে প্রস্তুত। ত্বকে আদার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন কয়েকটি ঘরোয়া উপায়-

রাতারাতি ত্বক সাদা করার জন্য আদা তেল তৈরি করুন?


আপনি তাজা আদা, একটি বয়াম বা বোতল, আপনার পছন্দের তেল (নারকেল, জলপাই, তিল, অ্যাভোকাডো) এবং একটি ছাঁকনি ব্যবহার করে বাড়িতে সহজেই আদার তেল তৈরি করতে পারেন। আদা খোসা ছাড়িয়ে সূক্ষ্মভাবে কিমা করে জার বা বোতলে রাখতে হবে। তেল গরম করুন কিন্তু খুব গরম না, এবং আদার উপর ঢেলে দিন। তারপরে আমরা অনেক সময় স্কিনের সমস্যায় ভুগি। আমাদের চারপাশে এমন অনেক কিছু আছে যার মাধ্যমে ত্বক সুন্দর হয়। আপনি চাইলে আদার ব্যবহারের মাধ্যমেই আপনার ত্বক সুন্দর করতে পারেন। আদার স্বাদ বা চায়েই আদা ব্যবহৃত হয় না বরং ত্বকের যত্নে আদার যাদুকরী ব্যবহার রয়েছে। আদায় যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট তা ত্বকের জন্য ভালো। এছাড়া হজমে সহায়তা করে আদা। মূল কথা আদা সুপারহিরোর দায়িত্ব পালন করে।


আদা তেল কিভাবে তৈরি করব?


পরিচিত একটি মশলা আদা। এর নানা উপকারিতা রয়েছে। রোগ প্রতিরোধে আদার জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু অনেকেই জানেন না, আদার মতো এর তেলেরও রয়েছে নানা উপকারিতা। আদার তেলে রয়েছে অ্যালিসিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন সি-র মতো নানা উপকারী উপাদানে। শরীরের নানা সমস্যা সমাধানে এই তেল উপকারি ভূমিকা রাখে। 


আরো পড়ুন :  ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে যেসব খাবার ও খাবার খাওয়ার নিয়ম


চলুন জানা যাক  আদা তেল কিভাবে তৈরি করব


শুকনো আদা ছোট ছোট টুকরো করে নিন; একটি সসপ্যানে স্থানান্তর করুন। নারকেল তেল যোগ করুন; কম আঁচে হালকা গরম করুন যতক্ষণ না আদা থেকে প্রাকৃতিক তেল তেলে ঢোকে, কমপক্ষে 2 ঘন্টা। বড় টুকরো মুছে ফেলার জন্য একটি ছাঁকনি দিয়ে আদার তেল ছেঁকে নিন। 


ত্বক সাদা করার জন্য আদা ব্যবহার?


প্রতিদিন খানিকটা আদা কেটে নিয়ে ত্বকে ভালো করে ঘষুন। সারাদিন শেষে বাসায় ফিরে খানিকটা আদা কেটে হাত, গলা ও মুখে ঘষুন। দেখবেন ত্বকের উপরিভাগের উজ্জ্বলতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। এতে করে ত্বকের দাগও চলে যাবে। মাঝে মধ্যেই কাজ করতে গিয়ে যে কেউ পুড়িয়ে ফেলতে পারেন হাত বা পায়ের বা দেহের যে কোনো অংশের ত্বক। ত্বকের এই পুড়ে যাওয়া নিরাময় করতে আদা বেশ সহায়ক। তাজা আদার রস পোড়া অংশে দিয়ে রাখুন। দেখবেন দ্রুত সেরে উঠবে। এছাড়া ত্বকের পোড়া অংশের দাগও দ্রুত চলে যাবে। 


আদার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া


  • ডায়রিয়া: বেশি পরিমাণে আদা খাওয়া হলে ডায়রিয়া হতে পারে। ...

  • গর্ভাবস্থায় অনিরাপদ: ধাত্রীবিদ্যার সূত্রানুসারে, দৈনিক ১,৫০০ মি. ...

  • রক্তপাত ঘটাতে পারে: আদাতে আছে 'অ্যান্টি প্লাটিলেট' উপাদান। ...

  • হৃদযন্ত্রের ঝুঁকি: হৃদয় বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা রক্তচাপের জন্য ওষুধ খান তাদের আদা খাওয়া বাদ দেওয়া উচিত।


পুরুষদের জন্য আদার উপকারিতা


আদার রয়েছে প্রদাহরোধী, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য। এই পুষ্টিগুলি পুরুষদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। দিনে ৫ গ্রাম আদা চায়ে খেতে পারেন। আদা উর্বরতা উন্নত করে আদা সেবন পুরুষদের উর্বরতা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আদা পুরুষদের যৌনক্ষমতা বাড়াতে ওষুধের মতো কাজ করে। শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে আদা খাওয়া উচিত। এর প্রভাবে শরীরের তাপমাত্রা আংশিক বৃদ্ধি পায় যা শুক্রাণু উৎপাদনে সাহায্য করে।


সুস্থ যৌনজীবন বজায় রাখতেও অপরিহার্য্য হতে পারে আদা। আদার মধ্যে থাকা ভোলাটাইল অয়েল স্নায়ুর উত্তেজনা বাড়ায় ও রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা ঠিক রাখে। আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। কম টেস্টোস্টেরন যৌন প্রভাবিত করতে পারে। আদা ও মধুর মিশ্রণ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ায়। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করতে পারে, রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে এবং রক্তের প্রবাহ বাড়াতে পারে।


আরো পড়ুন : মধু দিয়ে চোখের কালো দাগ ও গর্ত দূর করার উপায়


আদার রস শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যামিনো এসিড। প্রতিদিন আদার রস বা আদা চা খেলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ঠিক থাকে ও হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। আদার রস ধমনীতে চর্বি জমতে দেয় না, ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

আদার রস ব্যথা কমাতেও ওষুধের মতো কাজ করে। যেখানে আঘাত সেখানে লাগাতে পারেন আদার রস। এমনকি আদার রস পান করলেও ব্যথা কমে। শরীরের বিভিন্ন ধরনের বাতের ব্যথা ও জয়েন্ট পেইন থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে।


গবেষণায় দেখা গেছে- আদা লেবুর পানীয় শরীরে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে পারে, বিশেষ করে লিঙ্গ অঞ্চলে। আদা যৌন তাড়নাও বৃদ্ধি করতে পারে। পুষ্টিবিদদের মতে, আদা এবং মধু একসঙ্গে খেলে করলে তা শুধু বদহজম, সর্দি-কাশি, ব্যথা, ফোলাভাব, বমির মতো সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে না বরং যৌন জীবন সংক্রান্ত সমস্যাও দূর করতে পারে। বিবাহিত পুরুষদের জন্য এই সমন্বয় খুবই উপকারী হতে পারে।


স্থূলতা এবং অতিরিক্ত ওজন ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের সমস্যা তৈরি করে। এই ক্ষেত্রেও কাজে আসতে পারে আদা ও মধুর সংমিশ্রণ। এর জন্য এক টুকরো আদা চিবিয়ে তার পর দুই চামচ মধু খেতে পারেন। এছাড়া গরম পানিতে আদার গুঁড়া ও মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন।


অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে পুরুষদের মধ্যে বাড়ছে বন্ধ্যাত্ব৷ তাই রান্নাঘরে থাকা অতি সহজলভ্য এই উপাদান কিন্তু কাজ দেবে ম্যাজিকের মতো৷

আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সর্দি -কাশি দূর করে। এটি নিয়মিত খেলে সেক্স ড্রাইভ বাড়ে। এর জেরে যৌন কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়। সেক্স ড্রাইভ বাড়ানোর পাশাপাশি আদা পুরুষদের অকাল বীর্যপাতের সমস্যাও দূর করে। দুশিন্তায় ভুগলে এক টুকরো আদা অনেক উপকার দেয়। দুশিন্তার ফলে যৌন জীবন স্বাভাবিক থাকে না। অন্যদিকে আদা মানুষের দুশ্চিন্তা কমিয়ে দেয়। ফলে যৌন জীবনে অনেকেটাই সাহায্য করে।


ছেলেদের আদা খেলে কি হয়?


নিয়মিত আদা খাওয়ার অভ্যাস আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আদার মধ্যে জিঞ্জেরল রয়েছে, একটি জৈব-সক্রিয় পদার্থ যা বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার মতো উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। এই পদার্থটি ফোলা জয়েন্টগুলো কমাতেও সাহায্য করে। এটি ক্যানসার এবং হৃদরোগের বিরুদ্ধেও শরীরে কাজ করে।


ছেলেদের জন্য আদা খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা আছে। আদা হজমে সাহায্য করে, শরীরের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে এবং পেটের সমস্যা যেমন গ্যাস বা অম্বল কমাতে সহায়ক। এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতেও উপকারী। এছাড়া, আদা শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা ঠান্ডা এবং কাশি উপশমে কার্যকর। তবে, আদা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ভালো নয়, কারণ এটি কিছু ক্ষেত্রে পেটের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। তাই, পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভাল।


আদা কি কি কাজে লাগে?


এটি ভেষজ ঔষধ। মুখের রুচি বাড়াতে ও বদহজম রোধে আদা শুকিয়ে চিবিয়ে খাওয়া হয়। অধিকন্ত সর্দি, কাশি, আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপায় আদা চিবিয়ে বা রস করে খাওয়া হয়। আদা আপনার গোপন সমস্যা দূর করবে আবার আদা একটি মহা ঔষধি। এর কিছু প্রধান ব্যবহার হলো:


হজমের সমস্যা : আদা হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস, অম্বল কমায়।


শীতল ল Symptoms : ঠান্ডা, কাশি বা ফ্লু হলে আদা খেলে উপশম হয়।


সংক্রমণ প্রতিরোধ : আদা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ রাখে, যা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।


ব্যথা উপশম : মাথাব্যথা, পেশির ব্যথা ও আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।


রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি : আদা রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সহায়তা করে, যা শরীরকে শক্তিশালী করে।


মেটাবলিজম বৃদ্ধি : এটি মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়ক, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।


মেজাজ ভালো রাখা : আদা মুড সুইং কমাতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।


ব্রণ দূর করে আদার রস!


দা শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এটি ত্বকের জন্যও উপকারী। বিশেষ করে যাঁদের ব্রণের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা নিয়মিত মুখে আদার রস ব্যবহার করুন। দেখবেন, অনেক দ্রুত ব্রণ দূর হয়ে যাবে।

আদার রস ত্বকের জন্য কতটা উপকারী, তার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়ায়। একনজরে চোখ বুলিয়ে নিন।


  • আদার রসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ত্বকের বলিরেখা দূর করতে বেশ কার্যকর। এটি শুধু দূষিত পদার্থই দূর করে না, রক্ত সঞ্চালনেও এই রস খুবই উপকারী।

  • আদার রস ব্রণের জীবাণু ধ্বংস করে। এর ফলে ব্রণ দূর হওয়ার পর আর ফিরে আসে না। নিয়মিত আদার রস তুলায় নিয়ে ব্রণের ওপর লাগান। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। 

  • ত্বকের কালো ছোপ ছোপ দাগ অথবা রোদের পোড়া দাগ দূর করতে নিয়মিত বাসায় ফিরে আদার রস মুখে ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের সব ধরনের দাগ দূর হবে।

  • আদার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বক নরম ও মসৃণ করে। এ ছাড়া মধু, আদার রস ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হবে।


উপসংহার 


আমাদের আজকের আর্টিকেল  আদা দিয়ে মুখের কালো দাগ  তোলার উপায় কি ।

আদা একটি বহুমুখী এবং স্বাস্থ্যকর উপাদান, যা বিভিন্নভাবে আমাদের উপকারে আসে। এটি হজমের সমস্যা থেকে শুরু করে শীতল, ব্যথা উপশম এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সহায়ক। রান্নায়ও আদার ব্যবহার খাবারের স্বাদ বাড়ায়। তবে, আদা খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিতি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে আদা একটি মূল্যবান অংশ হয়ে উঠতে পারে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url