সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব দূর করার ১০ উপায়

সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লান্ত লাগে? কিন্তু এমনটা হওয়ার তো কথা নয়। কোনও কাজে এনার্জি পাওয়া যায় না। মনে হয় আরেকটু ঘুম হলে ভালো হতো। কেন এমন হয়? শুধুই কি আলসেমি নাকি কোনও ভয়ঙ্কর রোগের ইঙ্গিত?


সারাদিনের কাজের পর রাতে টানা ঘুম। কর্মব্যস্ত জীবনে এটাই ডেইলি রুটিন। তবে সকালে উঠে ফ্রেশ লাগবে তার উপায় নেই। কেমন একটা দুর্বলভাব অনুভূত হয়। সারাক্ষণ হাই ওঠে। কাজে মন বসে না। মনে হয় আর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিলে বোধহয় ভালো হতো। এই ভাবনা কি সঠিক, না এর পেছনে রয়েছে অন্য কারণ?

চিকিৎসকদের দাবি এমন হয় রক্তে আয়রনের অভাবে। শুধু মেয়েরাই নয়, ছেলেদেরও হতে পারে এই সমস্যা। রক্তে আয়রনের ঘাটতি ডেকে আনতে পারে বিপদ।

তো চলুন জানা যাক সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব দূর করার উপায় কি


[1] দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুমের চিকিৎসা?


হাইপারসোমনিয়া হল পর্যাপ্ত পরিমাণের বেশি রাতের ঘুম হওয়া সত্ত্বেও দিনের বেলা জেগে থাকা এবং সতর্ক থাকতে না পারা। হাইপারসোমনিয়া কর্মজীবন, সামাজিক জীবন এবং গৃহজীবনকে চ্যালেঞ্জ করে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ওষুধ, অ-ড্রাগ বিকল্প এবং শিক্ষা এবং সহায়তা গোষ্ঠী ।


দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুমের চিকিৎসার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:


নিয়মিত ঘুমের সময় : প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমোতে যাওয়া এবং জাগার অভ্যাস তৈরি করুন।


ঘুমের পরিবেশ: আপনার ঘুমের স্থানকে আরামদায়ক এবং অন্ধকার করুন। অতিরিক্ত শব্দ এবং আলোর উৎস কমাতে চেষ্টা করুন।


সঠিক খাদ্যাভ্যাস: দিনের বেলায় ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন এবং ক্যাফেইন বা এলকোহল সীমিত করুন।


শারীরিক কার্যক্রম : নিয়মিত ব্যায়াম করুন, তবে ঘুমানোর সময়ের কাছাকাছি ভারী ব্যায়াম না করার চেষ্টা করুন।


আরো পড়ুন : স্কিন ক্যান্সার হলে কি মানুষ মারা যায়


মেডিকেল পরামর্শ : যদি সমস্যা অব্যাহত থাকে, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এটি কোনোUnderlying Medical Condition এর জন্যও হতে পারে।


মানসিক চাপ : উদ্বেগ বা মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা ইয়োগা করার চেষ্টা করুন।


এই পদক্ষেপগুলি আপনার ঘুমের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে।


[2] হালকা গরম পানিতে মধু-লেবুর রস


অনেকেই ওজন কমাতে সকালে খাটি পেটে হালকা গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খান।

এ পানীয় শুধু ওজনই কমায় না, ঘুম ঘুম ভাব কাটাতেও এটি বেশ উপকারী। কারণ এতে থাকা মেটাবলিজম বুস্টিং গুণ থাকে। এই পানি দ্রুত রক্তের সঙ্গে মিশে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে নিস্তেজ হয়ে থাকা স্নায়ু কোষগুলি জেগে ওঠে। তখন ঘুম ঘুম ভাবও কেটে যায়।


[3] একটু অন্যভাবে চা, কফি খেতে পারেন


বেশিরভাগ মানুষই সকালে উঠে চা, কফি  খান। এ ক্ষেত্রে তারা একটু ভুল করেন। আর তা হলো চা বা কফির সঙ্গে চিনি মেশানো। এ কারণে ঘুম আর ক্লান্তি ভাব কাটতে চায় না।

চিনি কার্বোহাইড্রেটের উৎস। ফলে এনার্জি জোগায়। কিন্তু চিনি খুব বেশিক্ষণ এনার্জি জোগাতে পারে না। এ কারণে কিছুক্ষণ পর আবার ক্লান্তিভাব ফিরে আসতে পারে। সে জন্য সকালের  চা খান চিনি ছাড়া  এতে ক্লান্তি ও ঘুম দুটোই কাটবে ক্যাফেইনের গুণে। এ ছাড়া চা-কফির ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্ককে সজাগ রাখতে বেশ কার্যকর।


[4] ঘুম কমানোর ঔষধ কোনটি?


অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, যেমন সিটালোপ্রাম (সেলেক্সা), ফ্লুওক্সেটাইন (প্রোজ্যাক), প্যারোক্সেটিন (প্যাক্সিল), সার্ট্রালাইন (জোলোফ্ট) পিটোলিস্যান্ট (ওয়াকিক্স), সোডিয়াম অক্সিবেট (জাইরেম, জাইওয়াভ) এবং সোলরিয়ামফেটল (সুনোসি) দিনের বেলায় ঘুমের সাথে সম্পর্কিত অতিরিক্ত ঘুমের চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়। 

[5] পানি পান করুন


পানি ঘুম ঘুম ভাব দূর করার সবচেয়ে ভালো ওষুধ। পানি পান করলে আমাদের দেহের কোষগুলো নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। এক গ্লাস পানি পান করে নিন। দেখবেন ঝিম ঝিম ঘুম ধরা ভাব কেটে গেছে। একই সঙ্গে পানি পান করলে মস্তিষ্ক নতুন করে কাজ করার জন্য তৈরি হয়ে যায়।


[6] ঘুম কমানোর ঔষধ কি কি ?


মোডাফিনিল নারকোলেপসি (একটি অবস্থা যা দিনের বেলা অত্যধিক ঘুমের কারণ হয়) বা কাজের ঘুমের ব্যাধি (নির্ধারিত জেগে ওঠার সময় তন্দ্রা এবং ঘুমিয়ে পড়া বা ঘুমিয়ে থাকতে অসুবিধার জন্য ব্যবহৃত হয় যারা রাতে কাজ করে বা ঘুরতে থাকে। 

  • বেনজোডিয়াজেপিনস: যেমন ডায়াজেপাম (Valium) বা লরাজেপাম (Ativan)।

  • জ-সংকেতক: যেমন জোলপিডেম (Ambien)।

  • অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ঘুমে সহায়ক হতে পারে, যেমন ট্‌রাইজোডোন (Desyrel)।

তবে, এই ওষুধগুলি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং আসক্তির ঝুঁকি নিয়ে আসে, তাই ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রাকৃতিক পদ্ধতি বা জীবনধারার পরিবর্তনও ঘুমের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।

[7] হাঁটাহাঁটি করুন


বসে থাকলে কিংবা চেয়ারে একটু গা এলিয়ে পড়ে থাকলে ঘুম ঘুম ভাব আরো জেঁকে বসে। তাই পাঁচ মিনিটের জন্য হাঁটতে পারেন। এতে শরীরের আলস্য কেটে যাবে। আর ঘুম ঘুম ভাবও দূর হয়ে যাবে।

চোখেমুখে পানি দিন

চোখে পানির ঝাপটা দিন। চোখে মুখে ঠান্ডা পানির একটু ঝাপটা দিলে মাথা ঝিম ধরা ও শরীরের অলসভাব একেবারে দূর হয়ে যাবে।


আরো পড়ুন : গর্ভ অবস্থায় কি পুষ্টিকর খাওয়ার খাওয়া উচিত


হাঁটাহাঁটি করার জন্য কিছু উপকারিতা আছে, যেমন:

  1. শারীরিক ফিটনেস: নিয়মিত হাঁটা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  2. মানসিক স্বস্তি: হাঁটা মনকে শিথিল করে এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  3. ক্যালোরি বার্ন: হাঁটার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
  4. হার্টের স্বাস্থ্য: এটি হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  5. সৃজনশীলতা বাড়ানো: হাঁটার সময় নতুন ধারণা বা সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়।

আপনি কিভাবে হাঁটবেন? যদি বাইরে হাঁটতে পারেন, তাহলে প্রকৃতির মাঝে হাঁটুন, আর যদি ভিতরে হাঁটতে চান, তাহলে বাড়ির আশেপাশে একটু ঘুরে আসুন।

[8] ঘুম ঘুম ভাব কিসের লক্ষণ


যেমন হাইপোথায়রইডিজম বা থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি হলে রোগী ক্লান্তি বোধ করেন, সঙ্গে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব থাকে। কিডনি বা লিভারজনিত সমস্যা হলেও দিনের বেলায় মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ভাব হতে পারে। মস্তিষ্কের কিছু রোগের কারণেও হতে পারে এই সমস্যা। হার্টের কিছু রোগ, এমনকি ক্যানসার থেকেও হতে পারে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব।


ঘুম ঘুম ভাব আরো অনেক কারণে হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং কারণ হল:

  1. অপর্যাপ্ত ঘুম: যদি রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, তবে দিনের বেলা ঘুম ঘুম ভাব আসতে পারে।
  2. মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা উদ্বেগের ফলে ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে।
  3. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন হলে, যেমন বেশি জাঙ্ক ফুড খাওয়া, ঘুম ঘুম ভাব তৈরি করতে পারে।
  4. শারীরিক সমস্যা: কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন অ্যানিমিয়া, ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের সমস্যা ঘুম ঘুম ভাবের কারণ হতে পারে।
  5. ওষুধের প্রভাব: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এ রকম অনুভূতি হতে পারে।

যদি এই অনুভূতি চলমান থাকে বা অন্য কোনও সমস্যা তৈরি করে, তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা

[9] কথা বলা


ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে চুপচাপ কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলে সেটি সম্ভব নয়। এতে কখনোই এই ঝিম ধরা ভাবটি যাবে না। কারণ চুপচাপ থাকলে আলস্য কাটানোর কোনো কাজই হবে না। এ সময় চাইলে সহকর্মী বা সঙ্গির সঙ্গে কথা বলতে পারেন।


[10] হঠাৎ করে ঘুম বেড়ে যাওয়ার কারণ কি?


  • লৌহের ঘাটতি: শরীর ক্লান্ত লাগার অন্যতম কারণ হল আয়রন বা লৌহের স্বল্পতা। ...

  • ঘুমের অভাব: ঘুমের অভাব বা দেরিতে ঘুমানো ক্লান্তিভাব সৃষ্টি করে। ...

  • অস্বাস্থ্যকর বা সামঞ্জস্যহীন খাদ্যাভ্যাস: আমরা যা খাই তা-ই আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলে। ...

  • পানি শূন্যতা: পানি শূণ্যতার মানে হল শরীরে পানির ঘাটতি হওয়া। ...

  • বাড়ন্ত শরীর: নির্ভর করবে বয়সের ওপর।


উপসংহার 

আমাদের আজকের আর্টিকেল সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব দূর করার ১০ উপায়। দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা হলে এটি মোকাবেলা করার জন্য সঠিক জীবনযাত্রার অভ্যাস, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, এবং শারীরিক কার্যকলাপ গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং ওষুধ নিতে পারেন। মনে রাখবেন, ঘুমের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা আপনার স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, তাই সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে আপনি এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url